সর্বশেষঃ
Featuredস্বাস্থ্য

কিডনিতে সমস্যা হওয়ার সাতটি কারণ

কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করার মানে হলো আপনার শরীর বা কিডনিতে কোনো সমস্যা হয়েছে অথবা আপনার কিছু অভ্যাস কিডনির ক্ষতি করছে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে এ অর্গানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন অভ্যাসে আসক্ত হওয়া যাবে না। এ প্রতিবেদনে কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন সাতটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আপনি প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্তঃ অধিকাংশ প্যাকেটজাত (প্রক্রিয়াজাত) খাবারে অতিরিক্ত মাত্রায় সোডিয়াম বা লবণ থাকে, যা কেবলমাত্র হার্টের জন্যই খারাপ নয়, এটি কিডনি সমস্যারও কারণ হতে পারে। যখন আপনি অতিরিক্ত লবণ খাবেন, আপনার মূত্রত্যাগের সময় সোডিয়াম বের হয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে, কিন্তু সমস্যা হলো এ সোডিয়ামের সঙ্গে ক্যালসিয়ামও চলে আসে। এর ফলে মূত্রের অত্যধিক ক্যালসিয়াম কিডনি পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, বলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নেফ্রোলজিস্ট জেমস সাইমন। দ্য ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস প্রতিদিন সোডিয়াম গ্রহণ ২,৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমিত রাখতে সুপারিশ করছে। কিন্তু অনেকে প্রতিদিন ৩,৪০০ মিলিগ্রামের চেয়েও বেশি সোডিয়াম খেয়ে থাকেন, কিছু লোক এর দ্বিগুণও গ্রহণ করেন। ডা. সাইমন বলেন, ‘লোকজন সাধারণত কার্বস, ফ্যাট ও ক্যালরি দেখে থাকেন, কিন্তু তারা কতটুকু সোডিয়াম আছে তাতে মনোযোগ দেন না।’

আপনার ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের বাইরেঃ হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) আপনার পুরো শরীরের জন্য বিপজ্জনক, বিশেষ করে কিডনি। ডা. সাইমন বলেন, ‘কিডনি হলো রক্তনালির একটি বড় সেট, যেখানে ইউরিন ড্রেন বা মূত্র প্রণালীও রয়েছে। আপনার বড় রক্তনালিতে হাই ব্লাড প্রেশার হলে ছোট রক্তনালিতেও হাই ব্লাড প্রেশার হবে।’ হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনির রক্তনালিতে ড্যামেজ হতে পারে- এছাড়া এ অর্গানে স্কার বা ক্ষতও হতে পারে।

আপনি ধূমপানের অভ্যাস ছাড়ছেন নাঃ যদি আপনি মনে করেন যে সিগারেট না ফুঁকার একমাত্র কারণ হলো ফুসফুস ক্যানসার, তাহলে আবার ভাবুন। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, ১৬ বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য ধূমপান ছেড়ে দিলে রেনাল সেল কার্সিনোমার (প্রাপ্তবয়স্কদের কিডনি ক্যানসারের সবচেয়ে কমন ধরন) ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এছাড়া ধূমপান রক্তনালিকে ড্যামেজ করতে পারে এবং হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, বলেন ডা. সাইমন। কাজেই অন্তত কিডনির সুস্থতার কথা বিবেচনা করে হলেও ধূমপান বর্জনের দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন।

আপনি তৃষ্ণার্ত হলে পানি পান করেন নাঃ একটি প্রচলিত পরামর্শ হলো, কিডনির কার্যক্রম ভালোভাবে চলার জন্য প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। হ্যাঁ ঠিক আছে, প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করতে পারলে শুধু কিডনি কেন, পুরো শরীরের জন্যই ভালো। কিন্তু প্রতিদিন মাত্র চার থেকে ছয় গ্লাস পানি পানেও কিডনিকে ভালো রাখা যেতে পারে, বলেন ডা. সাইমন। একথাটি বিশেষ করে তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা পানি পানে তেমন মনোযোগী নন। যারা প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করেন, তারা তাদের কিডনিকে বিপদের ঝুঁকিতে রাখছেন। শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে মূত্রের সঙ্গে সোডিয়ামকে বের করে দিতে পারে না এবং ব্লাড প্রেসারকেও স্বাভাবিক রেঞ্জে রাখতে পারে না। ডা. সাইমন বলেন, ‘কিডনিগুলো রক্ত প্রবাহের প্রতি খুবই সেনসিটিভ। এগুলো চায় না যে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগেন, কারণ পানিশূন্য শরীরে ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং কিডনিতে রক্ত চলাচলও হ্রাস পায়।’ তাই কিডনিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন, বিশেষ করে গরমের দিনে প্রচুর পরিশ্রম করলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না।

আপনি প্রতিনিয়ত পেইনকিলার ওষুধ খাচ্ছেনঃ যদি আপনি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার জন্য ওটিসি ওষুধ (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) খান, তাহলে সতর্ক হোন। এনএসএআইডি বা প্রদাহবিরোধী ওষুধ (যেমন- ইবুপ্রোফেন ও অ্যাসপিরিন) কিডনিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে ফেলে ও ক্ষত সৃষ্টি করে, কারণ এসব ওষুধ এ অর্গানের জন্য বিষাক্ত, বলেন ডা. সাইমন। আমরা বলছি না যে ওষুধ সেবন না করে তীব্র মাথাব্যথায় ভুগতে থাকেন, কিন্তু এটা মনে রাখা ভালো যে প্রায়সময় এনএসএআইডি সেবনে কিডনি সমস্যার ঝুঁকি উপরের দিকে ওঠতে থাকে। ডা. সাইমন বলেন, ‘যেসব লোক দীর্ঘসময় ধরে প্রতিদিন প্রদাহবিরোধী ওষুধ বা এনএসএআইডি সেবন করেন তারা কিডনি সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। আপনার ইতোমধ্যে কিডনি ড্যামেজ হয়ে থাকলে এসব ওষুধ সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন।’

আপনি মনে করছেন যে সাপ্লিমেন্ট নিরাপদঃ একটি প্রোডাক্টকে ‘প্রাকৃতিক’ হিসেবে বাজারে ছাড়ার মানে এটা নয় যে, এটি অবশ্যই আপনার জন্য ভালো হবে। ডা. সাইমন বলেন, ‘এমন অনেক হার্বাল মেডিসিন রয়েছে যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।’ উদাহরণস্বরপ, ঐতিহ্যবাহী হার্বাল মেডিসিনের একটি উদ্ভিজ্জ উপাদান হলো অ্যারিস্টোলোচিক অ্যাসিড, যা কিডনিতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেসব প্রোডাক্ট থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করছে যাদের লেবেলের ওপর অ্যারিস্টোলোচিয়া, অ্যাসারাম অথবা ব্রাগানশিয়া রয়েছে- কারণ এসব প্রোডাক্ট কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। যদি আপনি নিয়মিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণ না করেন, তাহলে যেকোনো সাপ্লিমেন্ট সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন, পরামর্শ দেন ডা. সাইমন।

আপনার ওজন দিনকে দিন বেড়েই চলেছেঃ এটা এখন আর বিস্ময়ের বিষয় নয় যে, অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত ওজন আপনাকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রাখে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম জটিলতা হলো কিডনি রোগ, অর্থাৎ ডায়াবেটিস কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস জনিত ইনসুলিন সমস্যা কিডনিতে প্রদাহ ও ক্ষতের কারণ হতে পারে, বলেন ডা. সাইমন। তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত কিডনি ফাংশন ও মূত্র চেক করা উচিত।’

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

টেক টাইমস বিডি

টেক টাইমস বিডি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেজের লিংক
টেক টাইমস বিডি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং তথ্য প্রযুক্তির আপডেট ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে টেক টাইমস বিডি সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
তথ্য প্রযুক্তির আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন www.techtimesbd.com ওয়েবসাইট।

আরও দেখুন
Back to top button
error: Content is protected !!