সর্বশেষঃ
বিজনেস

দুটি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানী দিয়ে শুরু করে এখন তিনি প্রমিক্সো শিল্পপার্ক এর মালিক

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আর দশজনের মতো চাকরির পেছনে ছোটেননি মৌসুমী ইসলাম। ২০০০ সালে বিদেশ থেকে দুটি চিকিৎসা সরঞ্জাম এনে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করেন বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম। একপর্যায়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রমিক্সো হেলথ কেয়ার।

২০১০ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন প্রমিক্সো শিল্পপার্ক। এখন দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে তারকা মানের হাসপাতালগুলো প্রমিক্সো হেলথ কেয়ারের উৎপাদিত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ফার্নিচার ব্যবহার করে। একসময় দেশে পুরো চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ফার্নিচার আসত বিদেশ থেকে। তা প্রমিক্সোর আগমনে কিছুটা কমেছে।

আমদানিনির্ভরতা ছেড়ে প্রমিক্সো উৎপাদকে পরিণত হওয়ার ফলেই এমনটা হয়েছে। আর মৌসুমী ইসলামের প্রমিক্সো হেলথ কেয়ার তো এখন বিদেশেও চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ফার্নিচার রপ্তানির স্বপ্নও দেখছে। প্রমিক্সো গ্রুপের গল্প শুনতে সম্প্রতি গাজীপুরে গিয়েছিলাম। প্রমিক্সো অবশ্য ‘আপার কারখানা’ নামেও সমধিক পরিচিত।

মৌসুমী ইসলাম জানান, প্রমিক্সো গ্রুপের উঠে আসার পথে শুরু থেকেই পাশে ছিল বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংক। তিনি বলেন, ‘আইএফআইসি ব্যাংক পাশে না থাকলে এত দূর আসতে পারতাম না। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে প্রমিক্সো আরও বড় হয়ে উঠবে। চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি করবে বাংলাদেশ।’

গ্রুপটি সম্পর্কে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার বললেন, ‘প্রমিক্সো একেবারে ক্ষুদ্র থেকে বড় হয়েছে। আগে বিদেশ থেকে পণ্য এনে বিক্রি করত। এখন নিজেরাই উৎপাদন করছে। বড় সরঞ্জামের পাশাপাশি ছোট চিকিৎসা সরঞ্জামও তৈরি করছে। ট্রেডিং থেকে উৎপাদনে গেছে প্রমিক্সো। সব মিলিয়ে ভালো করছে।’

প্রমিক্সো শিল্পপার্ক: গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় ২০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা প্রমিক্সো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মানে শিল্পপার্কের পুরো এলাকাটা সাজানো গোছানো। সাতটি ভবনে রয়েছে ১৩টি উৎপাদন ইউনিট। পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়ে কৃষি খামার। পাশেই কুকুর, বিড়াল, খরগোশ পালন চলছে। অন্যদিকে দেখা মিলল কয়েকটি জার্মান শেফার্ডের। এরপর উৎপাদন ইউনিটগুলো।

প্রমিক্সো শিল্পপার্কে কী কী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তার একটা তালিকা দেখে নেওয়া যাক—অপারেশন থিয়েটার (ওটি) টেবিল, ওটি লাইট, করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বেড, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বেড, ইসিজি মেশিন, প্রসূতি টেবিল, ডেন্টাল চেয়ার, রোগী মনিটর ও রোগী পরীক্ষার টেবিল।

আরও উৎপাদিত হচ্ছে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, নেবুলাইজার, এয়ার পাম্প ম্যাট্রেস, ওজন মাপার স্কেল, ট্রাস্ট মি কনডম, সার্জিক্যাল ও এক্সামিনেশন গ্লাভস, অটোক্লেভ, সাকশন মেশিন, বেবি ইনকিউবেটর, ফটোথেরাপি মেশিন, আইসিইউ সরঞ্জাম, ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি এবং একবার ব্যবহারোপযোগী চিকিৎসা সরঞ্জাম (যেমন সিরিঞ্জ, নিডল, কেনোলা, গ্লাভস)।

পুরো শিল্পপার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশবান্ধব কারখানার আদলে, যেখানে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণের সব ধরনের ব্যবস্থা ও নিজস্ব দমকল কর্মী। রয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। আর প্রত্যেক কর্মীকে কাজ শুরুর আগে পরিধান করতে হয় অ্যাপ্রোন বা বিশেষ পোশাক। সব মিলিয়ে গ্রুপটিতে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ঘুরে ঘুরে কারখানা দেখানোর সময় প্রমিক্সো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘আমি এমন এক ব্যবসা করি, যাতে মান চুল পরিমাণ খারাপ হলেই ব্যবসা শেষ। তাই সবার আগে নিশ্চিত করতে হয় পণ্যের মান। এরপরই পণ্য সরবরাহ করা হয়।’

মৌসুমী ইসলাম কিছুটা গর্ব করেই বললেন, ‘দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোও আমাদের পণ্য ব্যবহার করে। প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দেওয়া হলে দেশে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি অনেক কমবে। তবে এখনো চিকিৎসা সরঞ্জামের ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর।’

প্রমিক্সোর মেডিকেল সরঞ্জামের শোরুম ঢাকার উত্তরায়। যেটি দেশে উৎপাদিত মেডিকেল সরঞ্জামের প্রথম শোরুম। মৌসুমী ইসলাম বলেন, শিগগিরই সারা দেশে ৬৪ জেলায় শোরুম খুলবে প্রমিক্সো গ্রুপ। এর ফলে চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না।

আরও যত ব্যবসা: মৌসুমী ইসলাম শুধু চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন করেই থেমে নেই; গড়ে তুলেছেন প্লাস্টিক পণ্য, কাঠের ফার্নিচার ও স্টিলের ফার্নিচার তৈরির কারখানাও। পাশাপাশি পোষা প্রাণীকে নিরাপদে রাখা, এর খাদ্যের সংস্থান, যত্নআত্তি করাসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য গড়ে তুলেছেন এলডি ভেটেরিনারি হাসপাতাল অ্যান্ড ডে-কেয়ার সেন্টার।

মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘যখন একটা হাসপাতালের কাজ পাই, তখন অন্য ফার্নিচারও সরবরাহ করতে হয়। এ জন্য নিজেই প্লাস্টিক, কাঠ ও স্টিলের ফার্নিচার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছি, যাতে মান নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।’ রাজধানীর উত্তরার রবীন্দ্র সরণির ১৪/এ নম্বর ভবনে মৌসুমী ইসলামের তৈরি ভেটেরিনারি হাসপাতালেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন।

তিনি জানান, ২০১৯ সালে প্রায় ৬০০ প্রাণীর চিকিৎসা করা হয়েছে এই হাসপাতালে, যার ৭০ শতাংশই বিড়াল। বাকি প্রাণীদের মধ্যে বেশির ভাগ কুকুর। এ ছাড়া খরগোশ, গিনিপিগ, পায়রাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও আছে। পোষা প্রাণীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে এমন বিশেষায়িত হাসপাতাল, দিবাযত্ন কেন্দ্র ও হোটেল সুবিধার কথা বাংলাদেশে এর আগে শোনা যায়নি।

সব মিলিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রমিক্সো গ্রুপের টার্নওভার বা মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।

তথ্যসূত্র: প্রথমআলো

টেক টাইমস বিডি

টেক টাইমস বিডি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করতেঃ এখানে ক্লিক করুন
টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেজের লিংক
টেক টাইমস বিডি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতেঃ এখানে ক্লিক করুন এবং তথ্য প্রযুক্তির আপডেট ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে টেক টাইমস বিডি সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
তথ্য প্রযুক্তির আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন www.techtimesbd.com ওয়েবসাইট।

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button