সর্বশেষঃ
স্বাস্থ্য

মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভবের ৯ কারণ

মুখে তিক্ত বা ধাতব স্বাদ অনুভব করলে খুব বেশি দুশ্চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনাকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি ক্যানসারের মতো প্রাণনাশক রোগের উপসর্গ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ উপসর্গের কারণ জটিল বা মারাত্মক কিছু নয়, যেমন- আপনি কি খাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি পেতে পারেন। কিন্তু আপনাকে সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্তও করা যাচ্ছে না, কারণ মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি বিরলক্ষেত্রে লিভার/কিডনি রোগেরও লক্ষণ হতে পারে। এ প্রতিবেদনে মুখে তিক্ত বা ধাতব স্বাদ অনুভবের ৯ কারণ উল্লেখ করা হলো।

কিছু ওষুধঃ মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভব করার সর্বাধিক কমন কারণ হলো কিছু ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিন ও ব্লাড প্রেশারের ওষুধ এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। টেক্সাসের পিডিয়াট্রিশিয়ান লিসা লেভিস বলেন, ‘যখন শরীর ওষুধ শোষণ করে তখন ওষুধের উপাদান লালাতে নিঃসরিত ও নিষ্কাশিত হয়। এর ফলে মুখে প্রায়ক্ষেত্রে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হয়। সাধারণত যেসব ভিটামিন সাপ্লিমেন্টে আয়রন, ক্রোমিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিংক রয়েছে তা ধাতব স্বাদের অনুভূতি দিয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক, স্নায়ুর ওষুধ ও হার্টের ওষুধও এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওষুধের একটি কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মুখের শুষ্কতা- এটিও মুখে ধাতব/বাজে স্বাদের অনুভূতি দিতে পারে।’

গর্ভাবস্থাঃ গর্ভবতী নারীদের মুখে স্বাদের পরিবর্তন একটি কমন ঘটনা। নিউ ইয়র্ক সিটির ফিজিশিয়ান নেসোচি ওকেকে-ইগবোকোয়ে বলেন, ‘একজন গর্ভবতী নারীর টেস্ট বাডে এরকম পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত গর্ভাবস্থায় হরমোনগত পরিবর্তন।’ এটি সাধারণত প্রথম ট্রাইমেস্টারে হয়ে থাকে ও দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে এর বিলুপ্তি ঘটে।’

দাঁতের অযত্নঃ দাঁতের যত্ন না নিলেও আপনার মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে, বলেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত টাউরো কলেজ অব ডেন্টাল মেডিসিনের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্র্যাকটিস লিডার ইসাবেল গার্সিয়া। তিনি ডেন্টাল স্টুডেন্টদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং তদারক করেন। দাঁতের যত্ন না নিলে অথবা দাঁত পরিষ্কার না করলে জিনজিভাইটিস (মাড়ির প্রদাহ) ও পেরিয়োডন্টাইটিস (মাড়ির ইনফেকশন, যা নরম টিস্যু ও দাঁতকে সাপোর্ট প্রদানকারী হাড় ড্যামেজ করে) ডেভেলপ হতে পারে। ডা. গার্সিয়ার মতে, এসব মাড়ি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে। দাঁত চেকআপ ও ক্লিনিংয়ের জন্য প্রতি ছয় মাসে ডেন্টিস্টের কাছে ভিজিট করলে আপনার মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপডেটেড থাকতে পারবেন এবং দাঁত-মাড়ির যেকোনো সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে পারবেন।

সাইনাস ইনফেকশন, অ্যালার্জি অথবা শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের ইনফেকশনঃ রেসপিরেটরি অথবা শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নাকবদ্ধতা ও শ্লেষ্মাও আপনার মুখে তিক্ত স্বাদ সৃষ্টি করতে পারে। ডা. লেভিস বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে নাক ও গলার শ্লেষ্মার স্বাদ জিহ্বায় অনুভূত হবে।’ এসব সাইনাস সমস্যার মধ্যে সাধারণ ঠান্ডা, সাইনাস ইনফেকশন, মধ্য কানের ইনফেকশন, নাকের পলিপ ও সাইনাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সমস্যা অন্তর্ভুক্ত।

জিংক ঘাটতি অথবা অত্যধিক জিংকঃ জিংকের অভাব অথবা অত্যধিক জিংকের কারণে ডিসজিউসিয়া নামক কন্ডিশন বিকশিত হতে পারে, যেখানে স্বাদেন্দ্রিয় অস্বাভাবিক বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বলেন ওয়াশিংটনের ডায়েটিশিয়ান নিউট্রিশনিস্ট ক্রিস্টিন কস্কিনেন। তিনি আরো বলেন, ‘পুষ্টিহীনতা (যেখানে জিংক ঘাটতিও অন্তর্ভুক্ত) কোষের পুনর্জন্ম ধীর করতে পারে, যার ফলে স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। অন্যদিকে যেসব লোক সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে খুব বেশি পরিমাণে জিংক গ্রহণ করেন তাদের বমিভাব, পেটের অসুখ অথবা ডিসজিউসিয়ার (যেখানে তারা বিরক্তিকর তিক্ত স্বাদ পেয়ে থাকেন) অভিজ্ঞতা হতে পারে।’

কেমোথেরাপিঃ কেমোথেরাপি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া ক্যানসার রোগীরা বমিভাব ছাড়াও আরেকটি কমন অভিযোগ করেন এবং তা হলো মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি। অন্যান্য ওষুধের মতো তিক্ত স্বাদের ওষুধ ক্যানসার রোগীদের রক্তপ্রবাহে ইনজেক্ট করা হয় যা পরবর্তীতে লালাতে চলে আসে ও মুখে তিক্ত অনুভূতি দেয়।

পাইন নাট সিন্ড্রোমঃ ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল টক্সিকোলজি নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, পাইন বাদাম খাওয়ার ১২ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি হতে পারে- এ অবস্থাকে পাইন নাট সিন্ড্রোম বলে। এই বাদাম অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন সৃষ্টি করে না, কিন্তু এটি খাওয়ার পর যে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হয় তার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, বলেন ডা. ওকেকে-ইগবোকোয়ে।

মার্কারি পয়জনিংঃ মার্কারি পয়জনিং বা পারদ বিষাক্ততার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি, বলেন ডা. ওকেকে-ইগবোকোয়ে। তিনি আরো বলে, ‘পারদ সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে অথবা মিথাইলমার্কারি-দূষিত মাছ খেলে অথবা অন্যান্য উপায়ে একজন মানুষ পারদের সংস্পর্শ আসতে পারে। পারদের সংস্পর্শে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। একারণে মার্কারি টক্সিসিটি বা পারদ বিষাক্ততার উপসর্গগুলো জেনে রাখা ভালো, যেন প্রয়োজনে মেডিক্যাল সেবার জন্য ছুটে যেতে পারেন।’

লিভার অথবা কিডনির রোগঃ এটা বিরল, কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়- লিভার অথবা কিডনির রোগও মুখে তিক্ত স্বাদ দিতে পারে। এর কারণ হলো, এসব কন্ডিশন শরীরে কেমিক্যাল জমিয়ে ফেলে এবং এসব কেমিক্যাল লালাতে নিঃসরিত হয়ে তিক্ত স্বাদ সৃষ্টি করে, বলেন ডা. লেভিস। তিনি আরো বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, তীব্র কিডনি রোগের রোগীদের লালাতে অত্যধিক অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়, যা মুখে তিক্ত স্বাদের অনুভূতি দেয়।’

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি

টেক টাইমস বিডি

টেক টাইমস বিডি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ টেক টাইমস বিডি ফেসবুক পেজের লিংক
টেক টাইমস বিডি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং তথ্য প্রযুক্তির আপডেট ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে টেক টাইমস বিডি সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
তথ্য প্রযুক্তির আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন www.techtimesbd.com ওয়েবসাইট।

আরও দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!